আমের রোগ ও পোকামাকড়: প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা
আম, যা "ফলের রাজা" নামে পরিচিত, তার স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। তবে, সুস্থ আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, বিশেষত আমের প্রধান পোকামাকড় এবং আমের প্রধান রোগ যা ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সঠিক আমের রোগ ও পোকা ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করলে চাষিরা সুস্থ আমের বাগান বজায় রাখতে পারেন।
আমের রোগ ও পোকামাকড়ের তালিকা
পোকামাকড়:
- আম হপার
- আমের মিলিবাগ
- আমের ফল মাছি
রোগসমূহ:
- আমের বিকৃতি রোগ
- আমের অ্যানথ্রাকনোজ
- আমের লাল মরিচা রোগ
- আমের ব্ল্যাক টিপ এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষয়
- আমের ফল ঝরা
- আমের ডাইব্যাক
আমের প্রধান পোকামাকড়
১. আম হপার (Mango Hopper)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- পাতার নিচে ও ডালের ফাটলে হলুদাভ নিম্ফের উপস্থিতি।
- পাতায় মধুরস নিঃসরণ, যা ছাঁচ সৃষ্টি করে।
- ফুল ও ফলের ক্ষতির কারণে ফলন হ্রাস।
- অতিরিক্ত সংক্রমণে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- K-Cyper25 (Cypermethrin 25% EC): ২০০-৩০০ মি.লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
- Imd-178 (Imidacloprid 17.8% SL): ৮০-১০০ মি.লি. প্রতি একরে ব্যবহার করুন।
- সক্রিয় নিম তেল: জৈবিক ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর।
২. আমের মিলিবাগ (Mango Mealy Bugs)
- লক্ষণ ও ক্ষতি:গাছে নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক পোকা দেখা যায়।
- মধুরসের নিঃসরণ ও পাতার বিবর্ণতা।
- গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত ও ফল ঝরে পড়া।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- CHLORO20 (Chloropyriphos 20% EC): ৪০০ মি.লি. প্রতি একরে ব্যবহার করুন।
- Imd-178 (Imidacloprid 17.8% SL): ৮০-১০০ মি.লি. প্রতি একরে স্প্রে করুন।
- সক্রিয় নিম তেল: জৈবিক ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর।
৩. আমের ফল মাছি (Mango Fruit Flies)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- ফলের ত্বকে ছোট বাদামি ডিম্পল দেখা যায়।
- ফলের ভিতরে লার্ভা পাওয়া যায়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- Attack-CS (Lambda-Cyhalothrin 4.9%): ৩০০-৫০০ মি.লি. প্রতি একরে স্প্রে করুন।
- MAL 50 (Malathion 50% EC): ২৫০-৩০০ মি.লি. প্রতি একরে ব্যবহার করুন।
- সক্রিয় নিম তেল: জৈবিক ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর।
আমের প্রধান রোগসমূহ
১. আমের বিকৃতি রোগ (Mango Malformation)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- পাতার গুচ্ছ বৃদ্ধি ও ফুলের অস্বাভাবিকতা।
- ফলন কমে যায়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- আক্রান্ত শাখা ছাঁটাই করুন।
- Azozole (Azoxystrobin 18.2% + Difenoconazole 11.4% SC): ১৬ লিটার পানিতে ২০ মি.লি. মিশিয়ে স্প্রে করুন।
২. আমের অ্যানথ্রাকনোজ (Mango Anthracnose)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- পাতায় ও ফলে কালো বা বাদামি দাগ পড়ে।
- ফুল ঝরে যায়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- CONCOR (Difenconazole 25% EC): ১২০-১৫০ মি.লি. প্রতি একরে ব্যবহার করুন।
- বোর্দো মিশ্রণ: ২০০ লিটার পানিতে ১ লিটার মিশিয়ে স্প্রে করুন।
৩. আমের লাল মরিচা রোগ (Mango Red Rust)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- পাতায় লাল-কমলা দাগ দেখা যায়।
- গাছের সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা কমে যায়।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- Katyayani Hexa 5 Plus (Hexaconazole 5 SC) ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করুন।
- Katyayani Sulvet (Sulphur 80% WDG) ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করুন।
৪. আমের ব্ল্যাক টিপ ও অভ্যন্তরীণ ক্ষয় (Mango Black Tip and Internal Necrosis)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- ফলের টিপ কালো হয়ে যায়।
- ফল বাজারজাত করার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- Katyayani Bordeaux Mixture (Copper Sulphate 3.0% + Calcium Hydroxide 0.6%) ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করুন।
৫. আমের ফল ঝরা (Mango Fruit Drop)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- ফুল ও ছোট ফল অকালেই ঝরে পড়ে।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- Katyayani Boron 20% EDTA সার ব্যবহার করুন।
- Katyayani Calcium Nitrate সার ব্যবহার করুন।
৬. আমের ডাইব্যাক (Mango Dieback)
লক্ষণ ও ক্ষতি:
- ডালের আগা থেকে শুকিয়ে যাওয়া।
- শাখা ও পাতা ঝরে পড়া।
নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:
- Katyayani Azozole (Azoxystrobin 18.2% + Difenoconazole 11.4% SC) ফাঙ্গিসাইড ব্যবহার করুন।
উপসংহার
সুস্থ আমের বাগান নিশ্চিত করতে পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনার কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে আম চাষিরা অধিক ফলন পেতে পারেন। রাসায়নিক ও জৈব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সমন্বিত প্রয়োগ ফলপ্রসূ ফলন নিশ্চিত করতে পারে।