সরিষা চাষের ক্ষেত্রে সরিষার স-ফ্লাই (Mustard Sawfly) একটি বড় সমস্যা হতে পারে। এদের জীবন চক্র, প্রজনন এবং ক্ষতিকারক স্তরের উপর ভিত্তি করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
জীবনচক্র:
১. স-ফ্লাই এর জীবন চক্র:
- ডিম অবস্থা: ৪-৮ দিন
- লার্ভা অবস্থা: ১৫-১৬ দিন
- পিউপা অবস্থা: ৪-১৫ দিন (মাটির নীচে)
- পূর্ণাঙ্গ কীট: ২-৩ সপ্তাহ
২. প্রজনন প্রক্রিয়া:
- মাদি পোকা পাতার নিচে ডিম পাড়ে
- একক বা দলবদ্ধভাবে ডিম পাড়া হয়
- একটি মাদি ২০০-৩০০ ডিম পাড়তে পারে
ক্ষতির লক্ষণ:
১. প্রাথমিক লক্ষণ:
- পাতায় ছোট ছোট ছিদ্র
- পাতার উপরের অংশ খাওয়া
- শুধু শিরা অবশিষ্ট থাকে
২. মাধ্যমিক লক্ষণ:
- গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়
- ফুল ও ফল ধারণ কমে যায়
- ৩০-৪০% পর্যন্ত ফলন কমে যেতে পারে
দমন ব্যবস্থাপনা কৌশল:
নিচে উল্লেখিত ১০টি কৌশল সরিষার স-ফ্লাই নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হতে পারে।
১. সঠিক সময়ে বপন
সরিষা চাষের সঠিক সময়ে বপন করলে সরিষার স-ফ্লাই আক্রমণ কমানো যায়। সাধারণত, অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম দিকে বপন করলে আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে।
২. স্বাস্থ্যকর চাষাবাদ
স্বাস্থ্যকর চাষাবাদের মাধ্যমে সরিষার গাছের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়। জমিতে পর্যাপ্ত সার, জৈব সার এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা উচিত।
৩. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সরিষা চাষে সরিষার স-ফ্লাই উপস্থিতি দ্রুত চিহ্নিত করা যায়। ক্ষতির প্রাথমিক স্তরে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৪. জৈব নিয়ন্ত্রণ
জৈব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরিষার স-ফ্লাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, Bacillus thuringiensis এবং Beauveria bassiana ব্যবহার করে মাছির লার্ভা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- নিম তেল স্প্রে (৫ মিলি/লিটার)
- ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস প্রয়োগ
- প্যারাসাইটয়েড ওয়াস্প সংরক্ষণ
- জৈব কীটনাশক ব্যবহার
৫. প্রাকৃতিক শত্রু ব্যবহার
সরিষার স-ফ্লাই প্রাকৃতিক শত্রু যেমন পাখি, পতঙ্গ এবং অন্যান্য পরজীবি মাছি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৬. হাতে ধরে সংগ্রহ
সরিষা চাষের প্রাথমিক স্তরে হাত দিয়ে সরিষার স-ফ্লাই সংগ্রহ করে ধ্বংস করা যেতে পারে। এটি ছোট মাঠের জন্য কার্যকর হতে পারে।
৭. ফেরোমোন ট্র্যাপ
ফেরোমোন ট্র্যাপ ব্যবহার করে সরিষার স-ফ্লাই প্রজনন কমানো যায়। এটি মাছির পুরুষ সদস্যদের আকৃষ্ট করে এবং তাদের ধ্বংস করে।
৮. রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ
খুবই প্রয়োজন হলে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, তাই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- ক্লোরপাইরিফস ২০ ইসি @ ২ মিলি/লিটার
- কুইনালফস ২৫ ইসি @ ২ মিলি/লিটার
- সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি @ ১ মিলি/লিটার
সমস্ত প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য কিনতে কাত্যায়নী অর্গানিকসের "কৃষি সেবা কেন্দ্র" অনলাইন স্টোর ভিজিট করুন
৯. বিকল্প ফসল চাষ
বিকল্প ফসল চাষের মাধ্যমে সরিষা চাষে সরিষার স-ফ্লাই আক্রমণ কমানো যায়।
১০. শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি
কৃষকদের মধ্যে সরিষার স-ফ্লাই সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ক্ষতির প্রভাব কমানো যায়। এর মাধ্যমে তারা সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs):
Q. কখন স-ফ্লাই এর আক্রমণ বেশি হয়?
A. চারা অবস্থা থেকে ফুল আসার আগে পর্যন্ত।
Q. কীভাবে প্রাথমিক আক্রমণ চেনা যায়?
A. পাতায় ছোট ছিদ্র এবং সবুজ রঙের লার্ভা দেখা যায়।
Q. কোন সময়ে কীটনাশক স্প্রে করা ভালো?
A. সকাল বা বিকেলে, বৃষ্টি না থাকলে।
Q. জৈব নিয়ন্ত্রণের সুবিধা কী?
A. পরিবেশ বান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর।
লিখেছেন :- দেবনারায়ন, এগ্রিস্টুডেন্ট