পেঁয়াজ টুইস্টার রোগ কী?
পেঁয়াজ টুইস্টার রোগ একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা প্রধানত থ্রিপস নামক রস শোষণকারী পোকা দ্বারা ছড়ায়। এই রোগে পেঁয়াজ গাছের পাতা মোচড়ানো ও বিকৃত হয়ে পড়ে, যার ফলে ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। যদি এটি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে ৩০-৫০% পর্যন্ত ফলন হ্রাস হতে পারে। তাই সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।
পেঁয়াজ টুইস্টার রোগের লক্ষণ
- মোচড়ানো ও কুঁকড়ানো পাতা: পাতাগুলি অস্বাভাবিকভাবে মোচড়ানো থাকে, যা দেখতে জালেবির মতো মনে হয়।
- হলুদ ও বিকৃত পাতা: সংক্রমিত পাতা হলুদ হয়ে যায়, পাতলা ও বিকাশহীন হয়ে পড়ে।
- গিটযুক্ত বৃদ্ধি: পেঁয়াজের পাতায় অস্বাভাবিকভাবে গিটের মতো মোটা অংশ দেখা যায়।
- দুর্বল ও ছোট কন্দ: আক্রান্ত গাছগুলি ছোট এবং হালকা ওজনের পেঁয়াজ উৎপন্ন করে।
- অসমান বৃদ্ধি: আক্রান্ত গাছগুলোর বৃদ্ধি অনিয়মিত হয় এবং ক্ষেতের মধ্যে একসঙ্গে সঠিকভাবে বাড়তে পারে না।
- ফলন হ্রাস: এই রোগের কারণে ফলন ৩০-৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
কেন পেঁয়াজ টুইস্টার রোগ হয়?
- থ্রিপস পোকার আক্রমণ: এটি মূলত থ্রিপস নামক ক্ষুদ্র পোকাদের মাধ্যমে ছড়ায়।
- অতিরিক্ত আগাছা: মাঠে বেশি আগাছা থাকলে পোকার সংখ্যা বাড়ে এবং রোগ দ্রুত ছড়ায়।
- সংক্রমিত চারা ও বীজ: আক্রান্ত বীজ বা চারা থেকে রোগ ছড়াতে পারে।
- অতিরিক্ত আর্দ্রতা: জমিতে বেশি পানি থাকলে পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়।
পেঁয়াজ টুইস্টার রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা
সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ (প্রাকৃতিক উপায়)
- স্বাস্থ্যকর বীজ ব্যবহার করুন: রোগমুক্ত এবং সার্টিফাইড বীজ নির্বাচন করুন।
- ফসল চক্র পদ্ধতি অনুসরণ করুন: একই জমিতে বারবার পেঁয়াজ চাষ করা এড়িয়ে চলুন।
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ করুন: ক্ষেত থেকে আগাছা ও অবাঞ্ছিত গাছপালা সরিয়ে ফেলুন, যা থ্রিপসের লুকানোর জায়গা হতে পারে।
জৈবিক নিয়ন্ত্রণ
- নিম তেল স্প্রে করুন: প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি নিম তেল মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করুন।
রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ
থ্রিপস দমন ও রোগ ব্যবস্থাপনার জন্য নিম্নলিখিত কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে:
-
থ্রিপস নিয়ন্ত্রণ:
- কাট্যায়ানি IMD 178 (ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮% SL): ৬০-৯০ মিলি প্রতি একর জমিতে প্রয়োগ করুন।
- কাট্যায়ানি নাশক (ফিপ্রোনিল ৪০% + ইমিডাক্লোপ্রিড ৪০% WG): ৫০ গ্রাম প্রতি একরে স্প্রে করুন।
-
ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ:
- কাট্যায়ানি মেটা (মেটালাক্সিল ৮% + ম্যানকোজেব ৬৪% WP): ৪০০ গ্রাম প্রতি একরে ব্যবহার করুন।
- কাট্যায়ানি COC ৫০ (কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% WP): ৩৫০ গ্রাম প্রতি একরে স্প্রে করুন।
উপসংহার
পেঁয়াজ টুইস্টার রোগ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে হলে থ্রিপস ও অ্যাফিড দমন করা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক মাঠ ব্যবস্থাপনা, জৈবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং কার্যকর কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং পেঁয়াজের ভালো ফলন নিশ্চিত করা যাবে।
প্রশ্নোত্তর (FAQs)
প্রশ্ন ১: পেঁয়াজ টুইস্টার রোগের জন্য কোন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে?
উত্তর:
- থ্রিপস নিয়ন্ত্রণ: ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮% SL (৬০-৯০ মিলি/একর), ফিপ্রোনিল ৪০% + ইমিডাক্লোপ্রিড ৪০% WG (৫০ গ্রাম/একর)।
- ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ: মেটালাক্সিল ৮% + ম্যানকোজেব ৬৪% WP (৪০০ গ্রাম/একর), কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% WP (৩৫০ গ্রাম/একর)।
প্রশ্ন ২: পেঁয়াজ টুইস্টার রোগ কেন হয়?
উত্তর: থ্রিপস ও অ্যাফিড পোকার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। সংক্রমিত বীজ, অতিরিক্ত আগাছা ও আর্দ্রতা রোগ বিস্তারের কারণ।
প্রশ্ন ৩: পেঁয়াজে কোন কীটনাশক স্প্রে করা উচিত?
উত্তর:
- কীটনাশক: ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮% SL, ফিপ্রোনিল ৪০% + ইমিডাক্লোপ্রিড ৪০% WG।
- ছত্রাক প্রতিরোধ: মেটালাক্সিল + ম্যানকোজেব, কপার অক্সিক্লোরাইড।
- জৈবিক সমাধান: প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি নিম তেল স্প্রে করুন।
প্রশ্ন ৪: পেঁয়াজ টুইস্টার রোগ কী?
উত্তর: এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা পেঁয়াজ গাছের পাতা মোচড়ানো, হলুদ ও দুর্বল করে তোলে এবং ফলন ৩০-৫০% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।